Socialize

দ্বিতীয় বিয়ে শেষ পর্ব

গল্পঃদ্বিতীয় বিয়ে
শেষ পর্বঃ
আবির আমার সামনে বসে আছে আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে...
আমি বিশ্বাস না করেই ভাবলাম স্বপ্ন..কিন্তু না এটা স্বপ্ন না.সত্যিই আবির আমার সামনে.তবুও কেমন জানি ঘোর..উঠে বসতে পারছিলাম না...ঘোরের মাঝেই জিজ্ঞাসা করলাম--
--তুমি এখানে কেন,আবির??
--তোমার একলার অধিকার নিয়ে শেষবার
তোমার আবিরকে দেখাতে এসেছি..
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম অভিমান আর বুক চাপা কষ্টে..আবিরও কিছু বললো না..আমিও নিশ্চুপ..অনেকক্ষণ আমাকে দেখছিলো... তারপর হঠাৎ কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবির বললো--
"আমি চলে যাচ্ছি,নীলা..."
বলেই এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না..
ওকে এক নজর দেখতে পারলাম না..
আবির চলে গেলো.এবার আমি তাকিয়েই থাকলাম ও যেখানে বসেছিলো সেখানটাই.দুমড়ে মুচড়ে পড়ছিলাম নিজের ভেতর..আমি যেন বিছানাতে পড়েই থাকলাম..
আমি পুরোটা দিন-রাত এভাবেই কাটালাম....
একফোঁটা স্থির হতে পারিনি.........
ভেতরটা ক্ষণে ক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিলো..
বাবা মা আমার ঘরে আসছিলো না..
হয়তো আমার অবস্থা সহ্য হচ্ছেনা তাদের চোখে...
কখন রাত হলো,কখন সকাল হলো সেদিন কিচ্ছু টের পাইনি..বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে করতে যখনই নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার মত হয়েছে,তখনই আমি হুড়মুড় করে উঠে পড়েছি..বিছানায় বসে দেয়ালের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকেছি...
পরদিন সকালে মা আমার ঘরে এলো ফোন হাতে নিয়ে..আমাকে ইশারা করলো কথা বলতে..
আমি অবাক হয়ে,ফোনটা আস্তে করে কানে ধরলাম..
কণ্ঠ শুনেই বুঝলাম,আমার শ্বাশুড়ি...
-কেমন আছিস,বউ??
প্রশ্নটা সোজা বুকের ভেতর গিয়ে লাগলো..বলতে চাইলাম,"আমার যেমনটা থাকা প্রাপ্য ছিলো,তার থেকে ভয়ংকর খারাপ.."
এই কথাটার উত্তর না দিয়ে,নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম--
"আপনি কেমন আছেন,মা??
আব্বা কেমন আছে..?"
তিনি একটু টেনে বললো -
আমি তো ভালোই আছি টুকটাক..কিন্তু তোর আব্বা বোধ হয় খুব একটা ভালো নেই..
শ্বশুর আব্বা বরাবরই আমার ভীষণ প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন..যতটা সময় ওই বাড়িতে ছিলাম,নিজের বাবার মতই তাকে যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করেছি..কিন্তু এই মুহুর্তে কেন জানি তার পুরো খবর টুকু নিতে পারলাম না..আমি চুপ করে থাকলাম..
কয়েক সেকেণ্ড যাওয়ার পরে শ্বাশুড়ি মা বলে উঠলো--
"আচ্ছা বউ..যে কারণে তোকে ফোন করেছিলাম..একবার একটু এই বাড়িতে আয়,তোর জিনিসপত্র গুলো আমি একলা চিনে গোছাতে পারছি না..."
কথাটা শুনেই আমার চোখ জ্বালাপোড়া করে কান্না চলে এলো..মা বললো টা কি আমাকে..তীব্র অভিমানের কণ্ঠ নিয়ে আমি বলে উঠলাম-
"আমি আসছি মা..."
বলেই আমি রেখে দিলাম..ফোন টা আর ধরে রাখতে পারলাম না..আমার মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে অঝোরে কেঁদে ফেললাম...মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো..আর আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো--
"সব ঠিক হয়ে যাবে মা..ধৈর্য্য ধর..."
আমি চুপচাপ চোখের পানি ঝরাতে লাগলাম..
তারপর চোখের পানি মুছে নড়েচড়ে বসেই সাথে সাথে উঠে পড়লাম..আর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম--
"মা,আমি একটু আবিরদের বাসায় যাচ্ছি..একটু কাজ আছে..."
মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বললো না..তারপর মাথা নেড়ে সায় দিতেই,
ভ্রু কুঁচকে বললো---
"সাথে করে তোর বাবাকে নিয়ে যা..."
আমি সোজা না করে দিলাম..বললাম--
"বাবা এমনিতেই অনেক কষ্ট করতেছে,বাবাকে বলতে হবে না.আমি কাজটা কমপ্লিট করে ঠিকই চলে আসবো..."
মা আমার উত্তরের পরে আর কিছু বললো না..
আমি কাপড়টা চেঞ্জ করে বাসা থেকে বের হতে গেলাম...মা আমাকে পেছন থেকে ডেকে বললো--
"সাবধানে যাস মা..আর তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস.."
আমি পেছন দিকে মুখ ঘুরিয়ে করুণ কণ্ঠে বলে উঠলাম--
"চিন্তা করো না,মা..এখানেই তো আমাকে থাকতে হবে..ঠিকই ফিরে আসবো..."
বলেই বের হয়ে গেলাম..গাড়ি আমাকে নামিয়ে দিলো শ্বশুরবাড়ি থেকে বিশ কদম দূরে..হেঁটে যাবো অথচ আমার না,পা এগোচ্ছিলো না..একটু একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলছি আর সামনের দিকে এগোচ্ছি...
অবশেষে বাসার দরজায় পা রাখলাম..মনে হলো আমার ভেতরে কেউ বিশাল ওজনের কিছু দিয়ে রেখেছে..যার ভারে আমি সোজা হতে পারছি না...
দরজায় কড়া নাড়তেই দেখি,আবির দরজা খুললো..
আবিরের চোখে-মুখে প্রচণ্ড বিষাদের ছায়া..খুন জোরে মোচড় দিয়ে উঠলো বুকের ভেতর।
নিজেকে ধরে রাখতে পারবো না এই ভয়ে,চোখ নামিয়ে ফেললাম নিচে..ব্যাপারটা ও খেয়াল করেই বলে উঠলো--
"আমি খুব ভালো আছি নীলা,জানো তো.?
আর তুমি একটুও ভালো নেই,এটা বুঝছো তো..?"
আমার বুকটা কেঁপে উঠলো কথাটা শুনে।
কষ্টে আমার ঠোঁট নড়ে উঠলো,কিন্তু কথা বের হলো না..একটু চুপ থেকে,আস্তে করে বলে উঠলাম--
"মা আমাকে কাপড় গোছানোর জন্য আসতে বলেছে.."
আবির তড়িঘড়ি করে সামনে থেকে সরে গেলো..
আমি মাথাটা নিচু করেই বাসার ভেতর ঢুকে পড়লাম..কাউকে দেখতে পারছিলাম না..মা অথবা আব্বা বলে যে ডেকে উঠবো,আওয়াজ বের হচ্ছে না গলা দিয়ে..পেছন থেকে আবির বলে উঠলো--
"আব্বা আর মা দুজনেই তাদের ঘরে...."
আমি কয়েক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে থেকে সোজা আব্বা মার ঘরের সামনে গিয়ে নক করলাম দরজায়..
সাথে সাথে আব্বা খুশির কণ্ঠ নিয়ে চেঁচিয়ে বললো--
"মা,তুই এসেছিস....?"
একটু ভালোবাসার ডাক শুনে আমার বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠলো..আমি গলা টান করে উত্তর নিলাম "জ্বী আব্বা" বলেই ঘরের মধ্যে ঢুকলাম...
দেখি বিছানায়,শ্বাশুড়ি মা শুয়ে আছে..
আব্বা মায়ের মাথার কাছে বসে আছে..দুজনেই আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে..দুজনের চোখেই পানি..আমি তড়িঘড়ি করে কাছে গেলাম..দেখি মায়ের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে..সারা মুখ কেমন জানি ফোলা ফোলা..
আমার ভয় করে উঠলো..মায়ের পাশে গিয়েই,মায়ের একটা হাত আলতো করে নিলাম..
ভয়া পাওয়া গলায় আব্বাকে প্রশ্ন করে বসলাম,
"আব্বা,মায়ের কি হয়েছে..??"
আব্বা প্রচণ্ড মায়া করে আমার দিকে তাকালো..উত্তর দিলো না..আমি মায়ের মুখের কাছে মুখ এগিয়ে দরদ ভরা কণ্ঠেই একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলাম--
"মা,ও মা..কি হয়েছে আপনার??আমি তো কিছুই বুঝছি না..আপনি এভাবে শুয়ে আছেন কেন..?আব্বা উত্তর দিচ্ছে না কেন...??"
মায়ের চোখের কোণা দিয়ে পানি গড়িয়ে গেলো..মুখের দিকে তাকিয়েই বোঝা যাচ্ছে,খুব কষ্ট হচ্ছে উনার..প্রচণ্ড মায়া হচ্ছে মাকে দেখে।।আমি অধৈর্য্য হয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম ভয়ে..আমার কান্না দেখেই মা আস্তে আস্তে উঠে বসতে গেলো..আমি কান্নাভেজা মায়ের পিঠের নিচে হাত দিয়ে উঠে বসতে সাহায্য করলাম..খেয়াল করছিলাম, মা আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে..পুরোপুরি বসানোর পরে মায়ের হাতের তালু নিজের হাতের ভেতর নিয়ে ম্যাসেজ করতে করতে আবারো জিজ্ঞাসা করলাম..
কিছুক্ষণ আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে হুহু করে কেঁদে উঠলো..আমার আরো খারাপ লাগলো..মা এভাবে কাঁদছে কেন??আমার আরো একটা হাত টেনে নিয়ে দুই হাতের ভেতরে হাত রেখে কাঁদছে..আমি নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে,আব্বাকে জোর গলায় বলে উঠলাম--
"আমার প্রাণ যাচ্ছে আব্বা..মায়ের কি হয়েছে,আমাকে বলুন.."
আব্বা আমার দিকে সম্ভবত সর্বোচ্চ পরিমাণ মায়া নিয়ে বলে উঠলো--
"কাল তুই চলে যাওয়ার আগে,আবির ঘরে গিয়েছিলো তোর মাকে বোঝাতে..কিন্তু বিয়ের কথা বলতেই আবির ওর মায়ের কাছে হাতজোড় করে বললো--
" মা,দোহাই লাগে আমার..তুমি আর একটা বারও বিয়ের কথা বলো না..."
তখনও তোর মা বুঝতে চায়নি..তুই চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবির বাসায় ফেরার পর থেকে আবির ছোটদের মতন শুধু কেঁদেই গিয়েছে..একসময় তোর অবুঝ শ্বাশুড়ি মা রেগে গিয়ে ওকে বলে বসলো--
"ভবিষ্যতের কথা ভেবে এমন করার দরকার নেই.."
তখন আবির কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো--
"নীলার পেটে শেষবার যে,আড়াই মাসের বাচ্চা ছিলো..তখন তোমার টাইফয়েড ছিলো মা..একদিন তীব্রজ্বরে তোমার হুঁশ ছিলো না..হাত পা ছুড়ছিলে যে,তোমার পাশে কেউ ছিলো না..তোমাকে সামলাতে গিয়ে নীলা মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলো..
ওই বারেই তো নীলার অ্যাবরশন করা হয়েছিলো..
ডাক্তার তখনই বলেছিলো,এবার ক্ষতিটা সর্বোচ্চ হয়েছে..নীলা কষ্ট পাবে বলে আমি ওকে কিছু বলিনি..আমি সব জানতাম.চেষ্টা করেও যখন বাচ্চা হচ্ছিলো না..ও নিজেই গিয়েছিলো ডাক্তারের কাছে..সত্যটাকে ও শুনবে এই ভয়ে আমি ডাক্তারের কাছে পর্যন্ত যাইনি সেদিন ওর সাথে...ভেবেছিলাম,নীলা বাসায় আসলে আমি সব ঠিক করার চেষ্টা করবো..কিন্তু দেখো না..সব কিছুই যেন শেষ হয়ে গেলো মা....।তারপর থেকেই তোর শ্বাশুড়ি এভাবে কাঁদছে......."
বলেই আব্বাও হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আর আমার পাশে এসে আমার মাথায় হাত রাখলো..
আমি থ হয়ে শুনছিলাম..বিশ্বাস করতে পারছিলাম না...মায়ের হাতের মধ্য থেকে আমি আমার হাত সরিয়ে নিলাম..মা অসহায় দুর্বলের মত আমার দিকে তাকালো..আমি উঠে দাঁড়িয়ে মায়ের একেবারে কাছে দাঁড়িয়ে মাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম....
মা সাথে সাথে আমার বুকে আছড়ে পড়ে কান্না শুরু করে দিলো..ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলে উঠলো--
"আমাকে মাফ করে দে,বউ..."
আমি কাঁদতে কাঁদতেই মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম--
"মা।আপনি একটুও কাঁদবেন না..আমার ভাগ্যে এমন ছিলো..তাছাড়া আর কিছু না.."
আমি মা আর আব্বা এভাবেই অনেকক্ষণ ধরে কাঁদলাম...আব্বা মা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে ভেবে আমি অনেক কষ্টে দুজনকে থামালাম..
সবাই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম...
মা আধো গলায় বলে উঠলো--
"আবিরের বাবা..
তুমি ওঠো..জলদি বউয়ের বাবার বাড়িতে খবর পাঠাও..আমাদের বাসায় দ্বিতীয় বিয়ের আয়োজন হবে আজ রাতেই...সবাইকে খবর দাও..আবিরকে ও বাসায় রেখে এসো..এ বাসায় আমার মেয়ে থাকুক..বেয়াই বিয়ান,ও বাসা থেকে বরযাত্রী আসবে আবিরকে নিয়ে...এ বাসায় আমি নিজে হাতে আমার মেয়ে সাজিয়ে রাখবো..কাজি ছাড়াই নতুন বিয়ে হবে দুজনার......"
বলা শেষ করেই মা আমার মাথা একটু নামিয়ে কপালে আদর ভরা চুমু খেলো।.
আমি মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম..আমার বিশ্বাস হচ্ছে না..চোখের কোণ জুড়ে খুশির পানি..বুকের ভেতরটা শীতল হতে থাকলো,সাথে অবাক করা খুশিতে বুকটা ধড়ফড় করে উঠছে...
আব্বা পাশ থেকে খুশিয়াল গলায় বললো--
"ঠিক আছে..তুমি যা বলবে তাই হবে,আবিরের মা.."
আমি মাথা উঁচু করলাম ভালোবাসার সম্মানের সাথে..মা আমার দিকে তীব্র স্নেহ ভরা মুখ নিয়ে তাকিয়ে বললো--
"এরকম লক্ষী মেয়ে আমি সবসময় চোখের সামনে রাখতে চাই..ছেলেকে ঘর জামাই বানাবো..."
মায়ের কথা শুনে তিনজনই হেসে উঠলাম..
মনে হলো,গত দুইদিন মরণের তীব্র যন্ত্রণা যেমন পেয়েছি..ঠিক তার উল্টো,স্বপ্নের মত সুখের সময় এই মুহুর্তে দুনিয়াতে আমার জন্য উপরওয়ালা নিজে পাঠাচ্ছেন..মায়ের মুখটা সবথেকে মমতাময়ী মনে হচ্ছিলো তখন..আমরা তিনজন তিনজনার দিকে শান্তির চোখে তাকাচ্ছিলাম..হঠাৎ আব্বা হাসির দিয়ে বলে উঠলো--
"আমাদের মেয়ের জন্য বাছাই করা সেরা,সেই পাত্রটা কই..?"
আবারো তিনজন হেসে উঠলাম..
মা আব্বাকে একটু ধমকের সুরে বলে উঠলো..
তুমি গিয়ে জলদি আগে বিয়ের সব আয়োজন করো..সময় একেবারে কম..আর পাত্রকে আমার মেয়ে আগে দেখে পছন্দ করে আসুক,তারপর ওকে ও বাড়িতে পাঠাচ্ছি..
আমি একটু লজ্জা পেয়ে উঠলাম..তিনজনের চোখেমুখেই খুশির বন্যা..
মা আমাকে অনেকটা আলতো ধাক্কা দিয়ে বের করলো ঘর থেকে...আমি আচল দিয়ে চোখে খুশির পানি মুছতে মুছতে খেয়াল করি,আবির দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে..ওর পুরো চোখ-মুখে পানি..শার্ট টাও ভিজে গিয়েছে..বুকের বাম পাশে হাত টা রেখে,নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে..আমার বুঝতে বাকি রইলো না,ও এতোক্ষণ সব শুনছিলো...
আমি এক মুহুর্ত দেরী না করে আবিরের হাত ধরে টান দিয়ে ওকে আমাদের ঘরে এনে,ওর বুকে মাথা রেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম..
ও আমাকে বোধ হয় শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরলো..ওউ কাঁদছে,আমিও কাঁদছি..অঝোরে দুজন কাঁদছি.অদ্ভুত এক সুখের কান্না..এক জয়ের কান্না..দুজনকে নতুন করে পাওয়ার কান্না..এ অনুভূতি কাউকে বোঝানোর নয়..কান্নার জন্য দুজনের কেউ কথা বলতে পারছিলাম না..বেশ কিছুক্ষণ কান্নার পরে আবির আমার মাথায় আলতো করে চুমু দিয়ে আমাকে ওর সামনে আনলো...
ভাঙা গলায় বলে উঠলো---
"আমার বাচ্চা লাগবে না, নীলা..
আমাদের বাবা মা দেরকে নিজেদের সন্তানের মতন দুজন মিলে বাকি জীবন দেখবো...."..
আমি ওকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম..।
উত্তর দেওয়ার আগেই জোর গলা করে আবারো বলে উঠলো--
"আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না,নীলা..
বেঁচে থাকতে তোমাকে আমার লাগবেই..."
আমি পরম আনন্দে মাথা নাড়ালাম..।
তারপর ও আমার চোখ মুখ নিজের হাত দিয়ে আলতো করে মুছে দিয়ে বললো--
"অনেক কেঁদেছো..সুখেও আর ও চোখে পানি আনবে না তুমি..আর হ্যাঁ,পাত্র পছন্দ হয়েছে তো...?"
দুজনেই হেসে উঠলাম আস্তে করে...
এর থেকে সুন্দর সময় পৃথিবীতে আর হতে পারে না.
নিজের সুখে নিজেকেই একটু অহংকারী মনে হলো..
একটু গর্ব করে গলাটা টেনে নিয়ে বললাম--
"হুম..এর থেকে ভালো পাত্র আমার জন্য আর কেউ হতেই পারে না..."
দুজন দুজনার দিকে হাসিমুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম..এর মাঝে মায়ের ডাক পড়লো--
"পাত্র, তুমি এখন তোমাদের ওই বাড়িতে যাও..বিয়ে রাতে হবে..."
আমরা দুজনেই আবারো হেসে উঠলাম।।কিন্তু এবার জোরে হাসলাম..ওর হাত ধরে দুজন মিলে মায়ের কাছে গেলাম..মা আমাদের দুজনকেই জড়িয়ে ধরে আদর করলো..আমি নিজের মনে বলতে থাকলাম,আমি ভাগ্যবতী আমি ভাগ্যবতী.."
দুজন মিলে যখন মায়ের দিকে তাকালাম।মা আমাদের হাত ধরে নিয়ে বললো--
"আজকের পর থেকে তোমারাই আমাদের বাবা-মা..আমরাই তোমাদেরকে বাবা-মা বলে ডাকবো..আমরাই সন্তান হবো..."
ইস কি ভয়ংকর সুন্দর কথা..
এতো সুন্দর কথা বোধ হয় দুনিয়াতে কেউ কখনো শোনেনি..অসহনীয় কষ্টের পরে এতোটা সুখই যথেষ্ট ক্ষণিকের জন্য নিজেকে অহংকারী ভাবার..।উপরওয়ালার কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া..
আবির বের হয়ে গেলো আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্য..
আব্বা সেই কখন বেরিয়েছে বিয়ের আয়োজনে..
পাশে থাকা কয়েকজন আত্মীয়কে বলা হয়েছে..
মা আমাকে নিয়ে বের হচ্ছে কেনাকাটায়..
রাতে আমাদের নাকি আবারো বিয়ে..
আমার জামাই ই নাকি আসবে আমাকে বিয়ে করে ঘরজামাই হয়ে এই বাসাই থাকতে..
সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন..
গল্পঃদ্বিতীয় বিয়ে
শেষ পর্ব
লেখাঃআফসানা জামান তুলতুলি
(আগের সবগুলো পর্ব প্রথম কমেন্টে দেওয়া আছে..এতোদিন গল্পটার সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আর যারা গল্পটাকে ভালোবেসেছন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা...)