Socialize

ভাগ্যর লিখন >> পর্বঃ ১

--- পার্কের ভিতরে আমার বেস্টফেন্ড মিতুকে এক ছেলে চুমু খেলো। আমি তা দেখে ৪২০ ভল্টের শক খেলাম । আমি পিছন থেকে গিয়ে 
মিতুর চুলের মুঠি ধরে ঠাশশ করে দুটো চড় মেরে দিলাম
--- ওকে মারা দেখে ছেলেটি ভয়ে লাফ মেরে উঠে এক দৌঁড় মেরে পালিয়ে গেলো
--- মিতুও আমার সাথে মারামারি করতে শুরু করে দিলো। 
তবে ওর চুলের মুঠি আমার হাতের মধ্যে থাকায় ওকে চড় মারতে আমার একটু সুবিধাই হলো। 
---- মিতু শুধু ওর বড় বড় আঙ্গুল দিয়ে আমাকে খামচিয়ে গেলো। 
---- মারামারি শেষ
তুই কোন সাহসে আমার গায়ে হাত তুললি,,,?? 
এতিমের বাচ্চা 
---- বেস্টফেন্ডের অধিকারে, সাহসে নয়। 
--- নিকোযি করেছে তোর ফেন্ডশিপের। দারা আমি এখনি ভাইয়া কে ফোন করে সব বলছি । 
--- আমার গায়ে হাত তুলিস,,!! 
তোকে আমি জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো। 
---- যে এতিম তার আবার কিসের জেলের ভয়,, বাইরে থাকলে তো দুমুঠো খাবারের জন্য কত কষ্ট করতে হয়। তার থেকে জেলে গেলেই ভালো হবে অন্তত খাবারটা পাওয়া যাবে।
---- তুই আমার গায়ে হাত তুললি কেন?? 
---- অপুর সাথে না মিশতে আমি তোকে এর আগেও অনেকবার নিষেধ করেছিলাম। 
---কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস নাই,, ওর সাথেই মিশে পার্কে বসে চুমাচুমি করচিস। 
---- আমার বিএফ এর সাথে চুমাচুমি করবো না কী করবো সেটা আমার পারসোনাল ব্যাপার। 
---- ও তোকে নয় তোর দেহকে ভালোবাসে। তোর বাবার টাকা-পয়সাকে ভালোবাসে । অনেক মেয়ের সাথেই ওর সম্পর্ক আছে। 
---- ঠাশশশশশশ
ওর নামে আর একটা বাজে কথাও বলবি নাহ 
তোর মত ১০ টা ছেলে ওর বাসার চাকর। 
এতিমের বাচ্চা তোকে আমি মাথায় তুলে ফেলেছি 
তাই আজ তোর এত্তবড় সাহস হয়েছে আমাকে মারার
----- নির্লজ্জ বেহায়া কোথাকার,, 
যত ইচ্ছে গালি দে,, আর শোন আমি তোকে শুধু বেস্টফেন্ড না ভালোও বাসি
হাহা
এই নে তো ভালোবাসার উপহার
ঠাশশশশশশ 
আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম মিতু আবারো আমাকে চড় মেরে চলে গেলো 
---- আমি জানি মিতু আমার উপর রাগ করে এসব বলেছে। 
ও কখনো ওর ভাইকে ফোন করে এসব বলবে নাহ। 
কেননা এর আগেও অনেকবার ওর সাথে আমার মারামরি হয়েছে। আর
ওর ভাই সব জেনেও আমাকে কিছুই বলবে নাহ,, কেননা ওর ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে গিয়েই আমার আপু আজ হাসপাতালে কমায় পড়ে আছেন।
চলুন তাহলে আপনাদের সব কথা খুলে বলা যাক 
---- মিতু যে আমাকে এতিম বললো আসলে আমি এতিম নয়,, 
এ শহরের একজন নামকরা ধনীর ছেলে আমি 
কিন্তু আজ আমার আব্বু থেকেও নেই। 
আমি যখন পেটে ছিলাম আর আমার আপুর ৫ বছর বয়স তখন আমার আব্বু আমার আম্মুকে তালাক দিয়ে এক ধনীর মেয়েকে বিয়ে করে নেন।
---- এরপর একদিন আম্মুও আমাকে জন্মদিয়েই চলে যান না ফিরার দেশে।
আমাকে কোলে করে নিয়ে আমার আপু মানুষের দারে দারে ভিক্ষা করে বেরিয়েছে। 
---- আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমার আপু মানুষের বাসায় কাজ করে এনে আমাকে খাইয়েছে 
---- এখাবেই আপুর কাছে আমি মা-বাবার আদরে বড় হতে থাকি। 
-- আমি যখন নাইনে উঠলাম তখন আমার আপু মানুষের বাসায়
কাজ করা ছেড়ে দিয়ে গার্মেন্টস এ চাকরি নিলো 
কেননা আমার আপু ছিলো অনেক সুন্দরী,, বাসায় কাজ করতে গেলে অনেকে খারাপ নজর দিতো। 
---- একদিন ssc পরীক্ষায় A+ পেয়ে আমি খুশিতে বাড়ি ফিরে দেখলাম আপু বাসায় ফিরে নাই
---- আপুর কাছে শুধু একটা ভাঙ্গা বাটন ফোন রয়েছে। 
আমি পাসের বাসায় গিয়ে একটা ফোন চেয়ে
আপুকে ফোন দিতে এক ছেলে মানুষ ফোন ধরে হ্যালো বললো
---- আপনি কে আমার আপুকে দিন,,, 
তোমার আপু হাসপাতালে তুমি এই হাসপাতালে চলে এসো 
---- আমি গিয়ে দেখলাম আপু বেডে শুয়ে আছেন,, ওর পুরো মাথার চুলগুলো কেটে ফেলে সাদা কাপড়ে বান্ডেজ করা। 
----- আমার আপুর কি হয়েছে?? 
মিতুর ভাই বললো আমাকে সন্তাসীর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে তোমার আপু গুলি খেয়েছে। 
---- আমি মিতুর ভাইকে গিয়ে বলতে লাগলাম 
আপনার জন্য আমার আপুর এমন হয়েছে আমার আপুর কিছু হলে আমি আপনাকে ছাড়বো নাহ 
আপু ছাড়া আমার আর কেউ নেই 
---- মিতুর ভাই এসে আমাকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বললো 
কে বলেছে তোমার কেউ নেই,, আমি আছি,, তোমার আপুর ভালো হতে যত টাকা লাগে সব টাকা আমি দিয়ে চিকিৎসা করাবো। 
--- আমার জীবন বাঁচাতে তোমার আপু নিজের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করে নি আর আমি এগুলো করতে না পারলে আমাকে আল্লাহ কোনদিনও ক্ষমা করবেন নাহ 
---- ডাক্তার এসে একটা রিপোর্ট দেখে জানালেন 
উনি কমায় চলে গেছেন,,ভালো হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে,, মাত্র এক পার্সেন্ট। 
---- আমি আপুকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম। আপু কিছুই বলছে নাহ 
দেখলাম শুধু ওর চোখের কোনা দিয়ে,, দুফুটো জল বেরিয়ে আসলো
---- সেই থেকে মিতুর ভাই আমার আপুকে দেখার জন্য একজন নার্স রেখেছেন,, এবং সমস্ত চিকিৎসার দায়িত্ব ও উনি নিয়েছেন।
---- আমি অনেকক্ষণ পার্কে বসে থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়ে রাস্তায় যেতেই 
কিছু পুলিশ এসে আমাকে এরেস্ট করলো 
সরি আবির 
আমার কিছু করার নেই,,উপর থেকে অর্ডার তোমাকে এরেস্ট করার
--- এবার আমার বোন আমাকে নয় ডাইরেক্ট থানার এস আই এর নিকেটে নারী নির্যাতন এর কমপ্লিন করেছে। 
আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি নিরুপায় তবে তোমার জন্য আমি সাজাটা কমিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাটা করতে পারি
---- আমি সব বুজতে পেরে আমার দুই হাত সামনে বাড়িয়ে দিলাম 
মিতুর ভাই আমাকে হ্যান্ডকাপ না পরিয়ে বললো
তার দরকার নেই তুমি এমনিই চলো
---- আমি জিপে বসে ভাবছি,, কতদিন মিতু আমাকে চড় মেরেছে বিনা দোষে বিনা কারণে,, 
কই আমিতো কারো কাছে কমপ্লেন করি নাই,, আর আজ ও আমার বিরুদ্ধে কমপ্লিন করে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিলো।
--- আমাকে জেলের ভিতরে ঢুকিয়ে মিতুর ভাই বললো তোমার যখন যা দরকার হয় আমাকে বলো, , 
আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো
---- আর তোমার নিম্নশ্রেণী একমাস জেল খাঁটতেই হবে।
---- আমি কিছু না বলে মিতুর ভাইকে বললাম,, আপনি শুধু আমার আপুকে দেখে রাখবেন প্লিজ,, আর আমার তো সামনে Hsc পরীক্ষা জেলের ভিতরেই যদি আমার পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিতেন,,, 
---- আচ্ছা সব করে দিবো,,, বলে মিতুর ভাই উনার চেয়ারে গিয়ে বসলো
---- আমার জেলে থাকতে কোন সমস্যাই হলো নাহ,,প্রতিদিন ক্যালেন্ডারের তারিখ গুনতাম কবে একমাস হবে 
জেল থেকে বেরিয়ে আপুকে দেখবো। 
--- এভাবে একটি মাস পার হয়ে গেলো। আমাকে জেল হতে মিতুর ভাই ছেড়ে দিয়ে বললেন 
এই টাকা গুলো রাখো। এখানে ৫০ হাজার আছে । 
আমি না নিতে চাইলেও জোর করেই আমাকে দিলো।
আর কতদিন মানুষের লাথি ঘুতো খেয়ে বাঁচবে এবার জীবনে কিছু করো।
---- হুমম অবশ্যই কিছু করবো,, তবে আমার পরীক্ষা টা হয়ে যাক আগে 
---- বের হয়ে আসছি আর ভাবছি টাকা গুলো যদিও ব্যবসা করার জন্য সামান্য তবুও আমার মত এতিমের কাছে এই টাকাগুলোই অনেক
--- এই টাকাগুলো দিয়েই আমি আমার ভাগ্যটা লিখবো। আপু সুস্থ হলে ভালো একটা ঘড়ে ওর বিয়ে দিবো। 
আর আমার বেঈমান বাবাকে সব বুজিয়ে দিবো,,
--- কিছুদিন পর আমার hsc পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো,, 
আমার আর মিতুর সিট পাশাপাশি পড়েছে,, 
---- আমি চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইলাম,, 
আমার ক্লাসের কয়েকজন বন্ধু এসে বললো,, তুই টেস্ট পরীক্ষায় কলেজের সব থেকে ভালো রেজাল্ট করলি, এরপরই কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি?? 
---- জানিস আমরা সহ কলেজের সব স্যারেরা তোকে কত খুঁজেছি,সব স্যারেরা ধরে আছেন তুই কলেজের মুখটা উজ্জল করবি,, আর তুই কিনা এতদিন পর পরীক্ষার হলে এসে হাজির হয়েচিস??
-- কি হলো কিছু বলিস না যে,,,??
--- আমি এতদিন জেলে ছিলাম,, ৫ দিন হলো ছাড়া পেয়েছি 
--- আমার কথা শুনে সবাই যেনো আকাশ হতে পড়লো,,,
..
..
..
চলবে?? 
#ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ১ 
লিখাঃ Shakil
..
(গল্পটি ভালো লাগলে জানাবেন
আপনাদের সারা পেলে গল্পটির 
২য় পার্ট লিখবো)