Socialize

ভালোবাসার গল্প

ও যখন রোজ সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয় তখন আমার বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠে। মানুষটার মুখ আমি সারাদিন দেখতে পাবো না৷ এরপর ও যখন রেডি হয়ে আমার শাশুড়ী মা মানে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা আমি আসছি। তোমার কিছু লাগবে। আমি তখন দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি। কখনো মায়ের সাথে কখনো ওর সাথে আমার চোখাচোখি হয়। আমি সরে গিয়ে দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। এরপর ও এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার প্রস্তুতি দিয়ে দরজাটা খুলে অফিসে যায়। আমি ওর চলে যাওয়া দেখি ততক্ষন দেখি যতক্ষন ওকে দেখা যায়।
আমি রান্নাঘরে দুপুরের খাবার বানাই। শাশুড়ী মা আসেন, দেখিয়ে দেন কীভাবে রান্না করতে হয়, কীভাবে ঘর সামলাতে হয়। সত্যি বলতে বিয়ের আগে আমি রান্নাঘরে হাতেগোনা কয়েকবার ঢুকেছি হয়তো। একমাত্র মেয়ে পানিটাও ঢেলে খাইনি। উনার হাতেই সবটা শিখা। মাঝে মাঝে রান্না করতে করতে উনি হারিয়ে যান উনার হারানো অতীতে। উনার শৈশব, বিয়ে, আমার শ্বশুরমশাইয়ের কথা, কখনো কখনো উনার ছেলের কথাও বলেন।এভাবেই কাটে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি ওকে ম্যাসেজ পাঠাই,ও পাঠায়। সময় করে রিপ্লাই দেয়।
দুপুরে আমি ওকে ফোন করি, কখনো ও করে, খোঁজ খবর নেই। খাবার খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করি, কিছু লাগবে নাকি জানতে চায়।
সন্ধ্যায় ওর ক্লান্ত মলিন চেহারা দেখলে আমার মায়া হয়। আমি চা বানাই। ও ফ্রেশ হয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসে। মা ছেলে একসাথে চা খায়। গল্প করে। কখনো তাদের গল্পের আসরে আমি হাজির হই আবার কখনো হইনা, টুকটাক কাজ করি।
আমি যখন রাতের খাবার বানাই ও তখন রান্নাঘরে আসে। আমাকে হেল্প করে, কথা বলে। তবে ওর আনাড়ি হাতের কাজগুলো আমার কাছে বেশ লাগে। কখনো হাত পুড়ে, কখনো এটা ওটা নিচে ফেলে। উল্টা পাল্টা করে এমন একটা মায়াবী চোখে ও আমার দিকে তাকায় আমি কিছু বলতেও পারি না ওকে।
রাতের খাবারের পর আমি যখন সব গুছানো শেষ করে যাই তখন দেখি দুটো মশারী ও টাঙিয়ে ফেলছে। আমি জিজ্ঞেস করি তুমি কেন করতে গেলা কষ্ট করে। আমি এসেই করতাম। ও উত্তর দেয়, দুটো মশারী টাঙাতে তোমার যদি পাঁচ মিনিট করে দশ মিনিট সময়ও লাগে তাহলে এই ১০ মিনিট সময় তোমাকে বেশি কাছে পাবো।
কথাগুলো বলছিলাম আমার স্বামী রাহেলকে নিয়ে। পারিবারিক ভাবেই সবটা হয়। সম্পর্কের শুরুটা ভালো না হলেও ও এখন আমার ভালো বন্ধু। আমি ওকে কখনো নাম ধরে ডাকিনি। ও বলতেই বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করি। আমার ও!!
ও নামক মানুষটা আমি না চাইতেও কখনো কখনো আমার চাওয়া পাওয়া গুলো বুঝে নেয়। আমি যখন মন খারাপ করে বসে থাকি ও তখন দুকাপ কফি বানায়ে আমাকে বলে,চলো কফি খেতে খেতে গল্প করি। আমি কফি মুখে নিয়ে ওর দিকে তাকাই। ও জিজ্ঞেস করে, কেমন হলো। নিজেকেই খেয়ে দেখতে বলি। ও মুখে নিয়েই মুচকি হাসে আর লাজুক চোখে তাকায়। কারণ, প্রতিবারই কফি তেতো, চিনি বেশি নইলে চিনির বদলে লবণ। বিষয়টা আমার বেশ ভালো লাগে। যেমনই হোক আমার জন্যেই তো বানানো৷ কোনো একদিন হয়তো পারফেক্ট হবে তখন হয়তো এই তেতো কফিটাকেই মিস করবো।
কখনো কখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করতে করতেই রাতটা পেরিয়ে যায়। মাঝে মাঝে আমরা রাতে হাঁটতে বের হই সন্ধ্যার পর। রাতের আকাশের তারা গুনার প্রতিযোগিতা করি কিন্তু পারি না। একসময় গুলিয়ে ফেলি। হাঁটতে হাঁটতে আমরা রাস্তার মোড়ের ফুচকা, ভেল্পুরি আইস্ক্রীম খাই।।
হঠাৎই একটা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। জেগে উঠি। এ্যাাাঁ তাহলে কি আমি এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম!কল্পনার রাজ্যে ছিলাম এতক্ষন! তাইতো বলি এই যুগে এমন কেয়ারিং স্বামী পাওয়া আর গোবরে পদ্মফুল ফোটা একই কথা!
লেখাঃ সুমাইয়া নওশিন